দীর্ঘ ২৩ বছরের ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আগামীকাল ২ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির বহু আকাঙ্খিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ ২৩ বছর আগে পটুয়াখালী ব্যায়ামাগার মাঠেই হয়েছিল জেলা বিএনপির সম্মেলন।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে পটুয়াখালী জেলা শহর সেজেছে এক নতুন রুপে। জেলা শহর ছাড়াও সমগ্র জেলার প্রত্যেকটি উপজেলাতেও নেতাকর্মীদের মাঝে দীর্ঘদিন পরে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই চলছে একদিকে সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা মিছিল পাশাপশি চলছে প্রার্থীদের পক্ষে সমর্থকদের মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা। এছাড়াও শহরের অধিকাংশ রাস্তায় সম্মেলনকে স্বাগত জানানোর পাশাপশি প্রার্থীদের পক্ষে তোরণ, বিলবোর্ড, বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।
ইতোমধ্যে সম্মেলনস্থল পটুয়াখালী জেলা ব্যায়ামাগারসহ সংলগ্ন মাঠকে সাজানো হয়েছে এক বর্ণিল রুপে। একই মাঠে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল। সে সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন পটুয়াখালী-১ আসন থেকে সে সময় নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ারভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। ঐ সম্মেলনের ২ বছর পর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ২০০৪ সালে জেলা বিএনপির এক সভায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্রিকে দল থেকে বহিষ্কাার করা হয়। ২০০৯ সালে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্জ আ. রশীদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়, যা পরবর্তিতে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট উন্নীত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণে জেলা বিএনপির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয় এবং যার জেরে কেন্দ্রীয় বিএনপির অফিসে ২০১২ সালে সাবজেক্ট কমিটির প্রত্যক্ষ ভোট নেয়া হয়। ২০১৩ সালে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি এবং এম এ রব মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। একদিকে জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী ২০১৩ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায় এবং ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ২ নভেম্বর সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ্জ আ. রশীদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্রিকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলার ৮ উপজেলা, ৫ পৌরসভা ও আহ্বায়ক ইউনিটসহ ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৩৭৯ জন কাউন্সিলর গোপন ভোটে জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। সম্মেলনের সভাপতি থাকবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া। প্রধান অতিথি ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখবেন তারেক রহমান। সম্মেলনের উদ্বোধক থাকবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। বিশেষ অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুল হক নান্নু, সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, সহ প্রচার সম্পাদক আছাদুল করিম শাহিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ নেছারুল হক, মো. হাসান মামুন, মো. দুলাল হোসেন প্রমুখ।
এদিকে এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির পূর্বকার বিভক্ত দুটি গ্রুপই মাঠে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। একদিকে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর অনুসারীরা, অন্যদিকে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও তার সমর্থকরা। এই দুই পক্ষই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ব্যানার, পোস্টার, ডিজিটাল ফ্লেক্স এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা।

