ঢাকাThursday , 6 November 2025
  1. Serialers
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. আরো
  8. ইসলামি প্রশ্নত্তর
  9. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  10. কৃষি
  11. খুলনা বিভাগ
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চট্টগ্রাম বিভাগ
  15. চাকরি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জেলখানা থেকে ছোট সাজ্জাদের ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’

admin
November 6, 2025 12:39 am
Link Copied!

চট্টগ্রামের ছোট সাজ্জাদ এখন এক অদ্ভুত অবস্থানের নাম। জেলখানায় বন্দি, কিন্তু বাহিরের পুরো অপারেশন চলছে তার নির্দেশে। কেউ কেউ একে বলেন, ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’। যেখানে জেলের ভেতর থেকেই সাজ্জাদ ঠিক করেন কে কোথায় যাবে, কার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে, এমনকি কোন এলাকায় কবে মুভ করবে তার বাহিনী।

গত আট মাসে অন্তত ৫টি হত্যাকাণ্ড ও সাতটি হামলার ঘটনায় সাজ্জাদ গ্রুপের নাম এসেছে। এরমধ্যে ৫টি ঘটনায় সরাসরি গুলি ছুড়েছে তার সহযোগীরা। পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, কারাগারে বসেই সাজ্জাদ ‘টার্গেট লিস্ট’ তৈরি করে পাঠান তার আস্থাভাজন রুবেল ও সোহেলকে।

চট্টগ্রামের ছোট সাজ্জাদ এখন এক অদ্ভুত অবস্থানের নাম। জেলখানায় বন্দি, কিন্তু বাহিরের পুরো অপারেশন চলছে তার নির্দেশে। কেউ কেউ একে বলেন, ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’। যেখানে জেলের ভেতর থেকেই সাজ্জাদ ঠিক করেন কে কোথায় যাবে, কার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে, এমনকি কোন এলাকায় কবে মুভ করবে তার বাহিনী।

গত আট মাসে অন্তত ৫টি হত্যাকাণ্ড ও সাতটি হামলার ঘটনায় সাজ্জাদ গ্রুপের নাম এসেছে। এরমধ্যে ৫টি ঘটনায় সরাসরি গুলি ছুড়েছে তার সহযোগীরা। পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, কারাগারে বসেই সাজ্জাদ ‘টার্গেট লিস্ট’ তৈরি করে পাঠান তার আস্থাভাজন রুবেল ও সোহেলকে।

সবশেষ বুধবার রাতে বায়েজিদ থানার চালিতাতলীর খন্দকার পাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় গুলিবিদ্ধ হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। এ সময় তার সহযোগী শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। পুলিশ সূত্র বলছে, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট সাজ্জাদের অনুসারী রায়হান গ্রুপ।

একাধিক সূত্র জানায়, সাজ্জাদ কারাগারের ভেতর থেকেই একাধিক ফোন ও বার্তার মাধ্যমে তার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই নেটওয়ার্ক এতটাই গোছানো যে, জেলের দেয়াল যেন আর কোনো বাধা নয় তার জন্য।

জানা গেছে, সাজ্জাদের একাধিক ‘বিশ্বস্ত লিংকম্যান’ রয়েছে যারা প্রতি সপ্তাহে পরিবার বা আইনজীবীর দেখা-সাক্ষাতের আড়ালে তার নির্দেশগুলো বাইরে পৌঁছে দেয়। সাক্ষাৎকারে সাজ্জাদ কোডওয়ার্ড ব্যবহার করেন-যেমন ‘চা বানাও’ মানে অপারেশন শুরু, ‘খাম পাঠাও’ মানে অর্থ পাঠানো সম্পন্ন। এই কোডগুলো সাক্ষাৎ শেষে লিংকম্যানরা বাহিরে এসে ডিকোড করে সংশ্লিষ্ট বাহিনী বা সহযোগীদের পাঠায়।

একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সাজ্জাদ খুব সাবধানি। কখনো স্পষ্ট করে কিছু বলে না। কথার মধ্যে ইঙ্গিত দেয়। তাতেই নির্দেশ বুঝে যায় তার লোকজন।’

একজন জেল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন কয়েদি আসলে তার ‘কর্মচারী’। ওরা ফোন লুকিয়ে রাখে, চার্জ দেয়, এমনকি কল রিসিভ করেও বাইরে বার্তা পাঠায়।’

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানি, সে জেল থেকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাত বাঁধা। তার দাবি, সাজ্জাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার। এরা প্রশাসনের ওপর চাপ দিয়ে সাজ্জাদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ নিশ্চিত করেন।

সাইবার ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, সাজ্জাদের ব্যবহৃত সিমগুলো সব ‘ব্ল্যাঙ্ক সিম’, যেগুলো একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়।

ফলে ডিজিটাল ট্র্যাক মেলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিছু বার্তায় শুধু ইমোজি ব্যবহার করা হয়।

একটি বিশেষ দপ্তরের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, যা দেখে মনে হচ্ছে সাজ্জাদের রিমোট কন্ট্রোল সাম্রাজ্য তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও জেল প্রশাসনের দুর্নীতি, দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল যোগাযোগের কৌশল এবং তৃতীয়ত রাজনৈতিক প্রভাবের নিরাপত্তা বলয়।

তিনি বলেন, সাজ্জাদ হয়ত বন্দি, কিন্তু বাস্তবে সে এখনো মুক্ত। তার ফোনের ওপাশেই চলছে এক অদৃশ্য রাজত্ব।

আট মাসে অন্তত ৫টি হত্যাকাণ্ড

গত আট মাসে অন্তত ৫টি হত্যাকাণ্ড ও সাতটি হামলার ঘটনায় সাজ্জাদ গ্রুপের নাম এসেছে। এরমধ্যে ৫টি ঘটনায় সরাসরি গুলি ছুড়েছে তার সহযোগীরা। পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, কারাগারে বসেই সাজ্জাদ ‘টার্গেট লিস্ট’ তৈরি করে পাঠান তাঁর আস্থাভাজন রুবেল ও সোহেলকে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, সাজ্জাদকে আটক করা গেলেও তার নেটওয়ার্ক বন্ধ করা যায়নি। তাঁর ভাষায়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাসের মিশ্রণ ঘটেছে। সাজ্জাদদের মতো অপরাধীরা রাজনীতির আশ্রয়ে বেঁচে থাকে। সাজ্জাদ জেলে গেলেও তার অনুসারীরা প্রতিদিন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা নামলেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, কেউ মুখ খুলতে চায় না।

চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলছেন, এই ধরনের ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’ বন্ধ করা কঠিন, যতক্ষণ না কারাগার-বাহির উভয় দিকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায়। তাদের মতে, রাজনীতি, পুলিশ, ও অপরাধের এই ত্রিমুখী জোটই চট্টগ্রামকে সবচেয়ে অরক্ষিত শহরে পরিণত করছে।

সবশেষ বুধবার রাতে বায়েজিদ থানার চালিতাতলীর খন্দকার পাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় গুলিবিদ্ধ হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। এ সময় তার সহযোগী শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। পুলিশ সূত্র বলছে, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট সাজ্জাদের অনুসারী রায়হান গ্রুপ। অথচ ছোট সাজ্জাদ বর্তমানে স্ত্রীসহ কারাগারে-সেখান থেকেই অপরাধের নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতি শুরু হয় গত বছর আগস্টে। এলাকা দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছোট সাজ্জাদ প্রতিপক্ষ আনিস ও কায়সারকে বায়েজিদের অনন্যা আবাসিক এলাকায় গুলি করে হত্যা করেন। এরপর থেকে তার নামই হয়ে ওঠে শহরের ভয়।

সেই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অক্সিজেন কালারপুল এলাকায় চাঁদা না পেয়ে নির্মাণাধীন ভবনে প্রকাশ্যে গুলি করেন সাজ্জাদ। এরপর ডিসেম্বর মাসে পুলিশ তাকে ধরতে গেলে সাজ্জাদই উল্টো গুলি চালান। আহত হন দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন। পাশের ভবনের ছাদে উঠে পালিয়ে যান সাজ্জাদ-পুলিশ তখনও গুলির ভয়ে পিছু হটে।

এ বছরের ২৯ মার্চ রাত দুইটার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোডে মোটরসাইকেলে এসে প্রাইভেটকারে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সাজ্জাদের অনুসারীরা। নিহত হন দুই যুবক—আব্দুল্লাহ আল রিফাত ও মো. বখতিয়ার ওরফে মানিক।

নিহতদের স্বজনরা জানান, সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহেই খুন হন রিফাত ও মানিক। একই সূত্রে পরবর্তীতে টার্গেট হন সরোয়ার বাবলা-যিনি বুধবার রাতে গুলিতে নিহত হন।

২৩ মে পতেঙ্গা সৈকতে গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে। এই ঘটনায়ও নাম আসে ছোট সাজ্জাদের।

বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রাতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত হতে পারে, সে বিষয়ে পুলিশের কাছে ধারণা আছে। অপরাধীদের মূল টার্গেট ছিল সরোয়ার, এরশাদ উল্লাহ নয়।’

তিনি জানান, সাজ্জাদ বর্তমানে স্ত্রীসহ কারাগারে। বাইরে থেকে তার অনুসারীরা ‘রিমোট কিলিং মিশন’ চালাচ্ছে। ‘আমরা তাদের শনাক্তের মতো আলামত পেয়েছি,’ বলেন কমিশনার।

তবে আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের এই সহিংসতার মূল শিকড় কারাগার ও রাজনীতির যোগসাজশে। ‘অপরাধীরা এখন ভয় পায় না, কারণ তারা জানে -আইন তাদের ধরলেও রাজনীতি ছাড়বে না,’ বলেন এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।