কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ওনারা ব্যাংঙ্কার দিয়ে রাজনীতি করাবে, কন্ট্রাক্টর দিয়ে নির্বাচন করাবে। গণ অধিকারের ভিপি নূরকে দিয়ে নির্বাচন করাবে-তাঁকে দিয়ে শুধু নির্বাচন‘ই করাবে না, তাঁকে টাকাও দেবে, কিন্তু নূর রাজী হয়নি। তখন তাঁরা রুহুল আমিন হাওলাদারকে (জাপার) ধরছে। তাঁরা আমাকে হারাতে একশ কোটি টাকার বাজেট করেছে। কিন্তু রুহুল আমিন হাওলাদার কেমনে নির্বাচন করবে? তাঁর বিরুদ্ধে তো অনেক গুলো মামলা, মার্ডার কেসও আছে-একটাতেও জামিন নাই, রেজাল্ট জিরো’।
গতকাল বুধবার বিকালে সদর উপজেলার বদরপুর শহীদস্মৃতি মাধ্যম বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী প্রচারনায় পটুয়াখালী-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী তাঁর কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর দেয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা বিএনপির অনেকের অভিযোগ,জেলা বিএনপির বিরুদ্ধে দেয়া তাঁর বক্তব্যে দলে বিভাজন সৃষ্টির পাশাপাশি ত্রায়োদশ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রচারনায় আলতাফ হোসেন চৌধুরী আরও বলেছেন,‘মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান টোটন, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক মেয়র মোস্তাক আহম্মেদ পিনুকে মুঠোফোনে কল করে কথা বলেছি। এরপর মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের যোগাযোগ করেছি। বাসা এবং অফিসে গিয়ে সকলে সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। কিন্তু চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী’।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন জেলা বিএনপি অভিযোগ করেছে-আমি তাঁদের ডাকছনা। আমি তাঁদের দাওয়াত খাওয়া জন্য তো ডাকব না-নির্বাচনে কাজ করার জন্য ডাকব। আমার প্রথমে দেখতে হবে কে কি কাজ করার জন্য কে যোগ্য। সেটা তো আমার দেখতে হবে,তার পরে তাঁদের দায়িত্ব দেয়া হবে। তবে এটা সত্য,যারা বিএনপির র্দুদিনে সম্মুখ সারিতে ছিল,রক্ত দিয়েছে,জেল খেটেছে-তাঁদের হাত দিয়েই নির্বাচন হবে’। এসময় তিনি ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগের ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে আরও অনেক বক্তব্য দিয়েছে।
আলতাফ হোসেন চৌধুরীমুঠোফোনে দাবী করেন,‘তাঁর দেয়া বক্তব্যের পক্ষে যথেষ্ট প্রমান তাঁর কাছে রয়েছে এবং তাঁরা এই কাজ গুলো করেছে। এছাড়াও তিনি বলেন,‘‘যাদের পায়ের নিচে মাটি নাই, তাঁদের বিরুদ্ধে আবার কিসের অভিযোগ’।
আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড.মজিবুর রহমান টোটন বলেন, তাঁর অভিযোগের কোন সত্যতা নাই এবং তিনি কোন প্রমান দিতেও পারবেন না। ভিত্তিহীন এসব বক্তব্যে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং দলে বিভাজন বাড়ায়’।
জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন,‘আলতাফ হোসেন চৌধুরী প্রতিনিয়ত জেলা বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। তাঁর এই বক্তব্যে গুলো দলে বিভাজন ও কোন্দল সৃষ্টি করে। তিনি এখনো ২০ বছর আগের মত প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতি বিশ্বাস করে’
জেলা বিএনপির সভাপতি আরও বলেন, জাপার এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে জড়িয়ে জেলা বিএনপিকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ছোট করছেন তিনি। অথচ আলতাফ হোসেন চৌধুরী নিজেই রাহুল আমিনের আত্মীয়ের বাসায় হাঁস-রুটির দাওয়াত খাচ্ছে। আওয়ামলীলীগকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তিনি জেলা বিএনপির বৈধ কমিটিকে অস্বীকার করছেন। মূলত তাঁর বয়স এখন অষ্টো আশির ঊর্ধ্বে,তাই সে কখন যে কি বলে,তা তিনি নিজেও জানেন না। আমি দলীয় সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম এবং থাকবো।
জেলা বিএনপি সুত্রে জানা গেছে,২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ আসনে নির্বাচিত হয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী এমপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এরপর তাঁর রাজনৈতিক সারথি বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি এবং বিএনপি অন্যতম নেতা পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাক আহমেদ পিনু গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। পর্যায় ক্রমে তাঁদের দ্বন্দ্ব-বিভাজন মারাত্মক আকার ধারণ করে তা প্রকাশ্যে দ্বিধা-বিভক্তির রুপ নেয়। এরপর আওয়ামী লীগের ১৭ বছর তাঁরা ক্ষমতার বাইরে থেকেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি। এছাড়াও জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি এ আসনের মনোনয় পেতে দীর্ঘদিন ধরে দৌড়ঝাপ করেছেন। পরবর্তীতে বিএনপি থেকে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে মনোনীত করা হলে দুই গ্রুপের বিভাজন মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষনা করা হয়। অথচ আলতাফ হোসেন চৌধুরী তাঁর বেশ কয়েকটি নির্বাচনী প্রচারনায় বলে আসছেন-নির্বাচনকে ঘিরে জেলা বিএনপি তাঁকে কোন প্রকার সহযোগীতা করছেন না। যা নিয়ে জেলা বিএনপির পূরনো দ্বন্দ্ব-বিভাজন আবার প্রকাশ্যে আসে।

